বাঁশখালী প্রতিনিধি।
চট্টগ্রাম বাঁশখালীতে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে নামে-বেনামে অবৈধ করাতকল বা স’মিল। অবৈধ এসব করাতকলের দাপটে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ ও বন বিভাগের ছাড়পত্র কিংবা লাইসেন্সও নেই এসব করাতকলের।
বাঁশখালী উপজেলা বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৪ পর্যন্ত ৫৩টি করাতকল রয়েছে বাঁশখালী উপজেলায়। এর মধ্যে লাইসেন্স নাই একটি করাতকলেও। লাইসেন্সের আবেদন জমা দিয়েছে কয়েকটি। এরপর আর কোনো জরিপ করা হয়নি।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন আইন অনুযায়ী কোনো করাতকল মালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। লাইসেন্স নেওয়ার পর প্রতিবছর নবায়ন করতে হবে। করাতকল স্থাপনের জন্য বন বিভাগের লাইসেন্স পাওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও ছাড়পত্র নিতে হয়।
উপজেলার বিভিন্ন করাতকল ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদন ছাড়াই চলছে অনেক করাতকল। এসব করাতকল চত্বরে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মজুত করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে রাতদিন নির্ঘুম এসব করাতকলে বিরামহীন চলে কাঠ চেরাই কাজ।
জানা গেছে, অবৈধ করাতকলগুলোতে সরকার নির্ধারিত কোনো আইন ও নীতিমালা মানার কোনো বালাই নেই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার লাইসেন্স করতে বলা হলেও প্রশাসনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেদার চলছে অবৈধ করাত কল।
বাঁশখালী’র পাহাড়ী সীমান্তঘেঁষা পাহাড় থেকে শুরু করে সমতল ভূমিতে লাগানো সব ধরনের গাছ কেটে সাবাড় করছে করাতকলের মালিক ও অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীরা। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। কমছে অক্সিজেনের ভারসাম্য। এসব কারণে দ্রুত এ সকল অবৈধ করাতকল বন্ধের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নজরধারীর অভাবে করাতকল স্থাপন করে কাঠের ব্যবসা করছেন। করাতকলের তথ্যের জন্য উপজেলা বন কর্মকর্তার অফিসে গেলে প্রায়ই সময় বন্ধ পাওয়া যায়।
বন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে,
বাঁশখালী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে সরকারের সংরক্ষিত ও অর্পিতা বিশাল বনাঞ্চল। সরকারের আইন অনুযায়ী সরকার ও সুরক্ষিত বনাঞ্চল এবং সর্বনিম্ন পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে নির্দেশনা থাকলেও আইন না মেনে গড়ে উঠেছে অনেক করাতকল।
বনকর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, বিভিন্ন সময়ে অবৈধ করাতকলের মালিকদের লাইসেন্স করতে বলা হলেও তারা খুবই উদাসীন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হলেও জনবল সংকট ও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির হস্তক্ষেপে বা সহযোগিতায় লাইসেন্স না করেই মালিকেরা চালাতে থাকে করাতকল। তিনি আরও বলেন, বৈধ লাইসেন্স না দেখে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও কোনো অদৃশ্য ইশারায় অবৈধ করাতকলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এই বিষয়ে আপনি একটু পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কথা বলিয়েন।
অন্য দিকে বাঁশখালী’র অবৈধ ইটভাটার অধিকাংশ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ। প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানোর মহড়া চলছে এসব ইটভাটায়। হাজার হাজার মণ কাঠ এনে পোড়ানো হয় ইট ভাঁটা গুলোতে। এমনকি চুল্লিতে পোড়ানোর উপযোগী করতে স’মিল স্থাপন করা হয়েছে ইটভাটার পাশেই। এমনই এক দৃশ্য মিলবে বাঁশখালী’র শেখেরখীল রাস্তার মাথায়। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব। উজাড় হচ্ছে সরকারের সবুজ বনায়ন প্রকল্প ও বনাঞ্চল। অন্যদিকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। কিন্তু বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে ‘ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেলেও লোকবল না থাকায় এসব স’মিলে তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো যাচ্ছে না।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশখালী’র শেখেরখীল রাস্তার মাথায় এক স্থানে লাগোয়া ৬টি স’মিল। রাতের আঁধারে পাহাড়ী জনপদ থেকে বিভিন্ন গাছ কেঁটে এই স’মিল গুলোতে চেরাই হয়। সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য গেলে মালিক পক্ষের কয়েকজন এগিয়ে এসে বলে কিছু সম্মানি নিয়ে চলে যান ভিডিও করার দরকার নাই। এখান থেকে সবাই সম্মনি নিয়ে যায় আপনি একটু দয়া করেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুঠোফোনে কল দিয়ে বলে, শেখেরখীল রাস্তার মাথায় সরকার গর্জন গাছ চেরাই হচ্ছে আপনি একটু এসে দেখেন। সরেজমিনে গিয়ে সব কিছুর সত্যতা মিলে।
ভুক্তভোগীরা জানাই এই স’মিলের উচ্চ শব্দের জন্য আমাদের রাতে ঘুম হারাম হয়ে যায়। অনেক স্কুল ছাত্র ছাত্রী রাতে পড়ার টেবিলে বসতে না পেরে মস্তিষ্ক বিকার হয়ে এই স’মিলের শ্রমিক হয়েছে। জানা গেছে, বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের তালিকায় নেই অনেক স’মিলের নাম।
তালিকা হালনাগাদ না করায় সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। পাহাড়ি জনপদ থেকে সরকারি রিজার্ভ গাছ ও বনের মার্দার ট্রি পযর্ন্ত সাবাড় হচ্ছে এই সব স’মিলে।আবার গ্রামাঞ্চল থেকে রেইনট্রি, কড়াই, আম, বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে ট্রলার ও নৌকায় ইটভাটা মালিকেরা এনে ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করেছেন।
স্থানীয় বনবিভাগ সহ সবাইকে ম্যানেজ করেই প্রকাশ্যে এ অবৈধ কাজ করে যাচ্ছেন স’মিল মালিকের অভিযোগ এলাকাবাসীর।
স’মিল মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম বাঁশখালীতে অনেক গুলো স’মিল রয়েছে সরকার যদি লাইন্সস দেয় তাহলে আমরা নিবো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম বাঁশখালীতে বিশেষ করে প্রধান সড়ক সংলগ্ন ও আভ্যন্তরীণ সড়ক সংলগ্ন সড়কের পাশেই প্রায় ৫০ এর অধিক অবৈধ স’মিল রয়েছে। সরকারিভাবে অনুমোদিত পরিবেশবান্ধব একটা স’মিল নাই।
চট্টগ্রাম দক্ষিণের বিভাগীয় বন কর্মকতা আবদুল্লাহ আল মামুন মুঠোফোন বলেন,
গত বছর আমরা অভিযান করেছি অবৈধ করারতকল এর বিরুদ্ধে। সরকারী নিয়ম মতে পাহাড় থেকে অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরত্বে এবং স্কুল কলেজ কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে করাতকল বসানো যায়। আমরা এর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবো।
আপনি আমাকে নাম টিকানা দেন যে ছয়টি অবৈধ করারতল রয়েছে এগুলো। আমি অভিযান পরিচালনা করবো এবং সবাইকে মামলা দিবো।