চট্টগ্রামের বাঁশখালীর খানখানাবাদের পশ্চিম রায়ছটা ৮ নং ওয়ার্ড এলাকায় আখতার ফারুক নামে এক প্রভাবশালী তার দলবল নিয়ে আশরাফ আলী নামে এক ভুক্তভোগীর জায়গা থেকে জোরপূর্বক মাটি কাটার জেরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম শহরে থাকা সত্বেও তাকে মামলার আসামি করায় পুরো এলাকাজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঘটনাটি গত ১৫ মে রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম রায়ছটা ৮ নং ওয়ার্ডস্থ রইয়া পুকুর পাড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরে প্রেমাশিয়া এলাকার আবুল হোসেনের পুত্র আব্দুর রশিদ নামে বাদী হয়ে গত১৮ মে চীফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চট্টগ্রামে একটি মামলা দায়ের করেছে। উক্ত মামলায় খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান -১ শহীদুল ইসলামসহ ৯ জনের নাম উল্লেখে আসামী করা হয়। ঘটনার সময় প্যানেল চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম প্রয়োজনীয় কাজে চট্টগ্রাম শহরে থাকলেও তাকে মামলার আসামি করায় পুরো এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সরেজমিনে পরিদর্শনকালে
স্থানীয়, আবদুল মালেক, বয়োবৃদ্ধ মোহাম্মদ হোসেন, আবুল বশারসহ অন্তত অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ বলেন, ঘটনার সময় খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ছিলেননা, তিনি চট্টগ্রাম শহরে ছিলেন। ঘটনাটি হয়েছে মুলত মাটি কাটার বিষয় নিয়ে, আখতার ফারুক নামে এক প্রভাবশালী তার লোকজন নিয়ে একই এলাকার আশরাফ আলী গংদের জায়গা থেকে জোরপূর্বক মাটি কাটছিলো। এতে আশরাফের লোকজন বাঁধা দেয় এবং প্রশাসনকে অবহিত করে। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি)’র নির্দেশে বাঁশখালী থানাধীন বাহারচড়া পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বে থাকা এস আই জামাল উদ্দিনের নেতৃত্ব পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত একটি স্ক্যাভেটর জব্দ করে। এতে আখতার ফারুকের লোকজন জায়গার মালিক আশরাফ আলীর লোকজনের উপর ক্ষিপ্ত হয়।এতে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
এই ঘটনার সময় প্যানেল চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম শহরে থাকা সত্বেও আখতার ফারুকের লোকজন উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে শহীদুল ইসলামকে মামলার ১ নম্বর আসামী করে তাকে হয়রানি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানি মুলুক এই মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
মামলার ২ নং আসামী ভুক্তভোগী আশরাফ আলী বলেন, আখতার ফারুকের নেতৃত্বে প্রভাবশালী মাটি সিন্ডিকেট চক্র জোরপূর্বক আমাদের জায়গা থেকে মাটি কাটছিল, বিষয়টি আমরা প্রশাসনকে অবহিত করি, প্রশাসন এসে ঘটনাস্থল থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত একটি স্ক্যাভেটর জব্দ করে। এতে ক্ষিপ্ত হইয়া আখতার ফারুকের লোকজন আমাদের উপর হামলা করে। আর ঘটনার সময় প্যানেল চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ঘটনাস্থলের আশেপাশেও ছিলোনা। কিন্তু মাটি খেকোরা তাকে কেন আসামি করেছে সেটি আমি জানিনা।
অপরদিকে মামলার বাদী আব্দুর রশিদের সাথে যোগাযোগের একাধিক বার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে বাহারচড়া পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মজনু মিয়া এবং এস আই জামাল উদ্দিন বলেন, মাটি কাটার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, এসিল্যান্ড মহোদয়ের নির্দেশে মাটি কথার কাজে ব্যবহৃত একটি স্ক্যাবেটর ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত স্ক্যাবেটরটি জিম্মায় দেয়ার জন্যে প্যানেল চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলামকে ফোন করা হয়। কিন্তু ওইসময় চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম চট্টগ্রাম শহরে ছিলেন, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না, কিন্তু তাকে কেন মামলায় আসামী করা হয়েছে সেটি আমরা জানিনা, এইসব কথা বলেন ইন্সপেক্টর মজনু মিয়া এবং এস আই জামাল।
এবিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, পশ্চিম রায়ছটায় মাটি কাটার জের ধরে দুপক্ষের সংঘর্ষের বিষয়ে আমি কোন কিছুই জানতামনা, কারণ আমি প্রয়োজনীয় কাজে শহরে গিয়েছিলাম। ওইদিন রাত আনুমানিক ৯টা বা সাড়ে ৯ টার দিকে এস আই জামাল উদ্দিন আমাকে ফোন করে একটি স্ক্যাবেটর জিম্মায় দেয়ার কথা বলেছিলেন, আমি ওইসময় শহরে থাকার বিষয়টি এস আই জামাল উদ্দিন বলেছিলাম। সেখানে আর কি হয়েছে না হয়েছে সে-সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। কিন্তু পরে দেখি যে আখতার ফারুকের পক্ষের আব্দুর রশিদ নামে এক লোক বাদী হয়ে কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছে,ওই মামলায় আমাকে ১ নম্বর আসামী করা হয়েছে। যে বা যারা আমাকে এই মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে তারা হয়তো আমার সম্মান হানি করার জন্যে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে হয়রানি করার জন্যে আমাকে এই মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে।
এসময় শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, সরেজমিনে তদন্ত করে দেখুন, যদি ঘটনার সাথে আমার সম্পৃক্ততা থাকে এবং ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম এমন কোনো প্রমাণ যদি কেউ দিতে পারে তাহলে আমি যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নিব। কিন্তু ঘটনাস্থলে না থাকা সত্বেও যে বা যারা আমাকে এই মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানি মামলা প্রত্যাহার পূর্বক ঘটনার সঠিক তদন্ত করে মাটি খেকো আখতার ফারুক, আব্দুর রশিদসহ সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন শহীদুল ইসলাম।
