পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সরকারি খাদ্য গুদামে বোরো-ইরি ধান সংগ্রহে নানা অনিয়ম, গরমিল ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীহীনতার কারণে পর পর তিন দিন খাদ্যগুদাম পরিদর্শন করেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক বাস্তব প্রতিবেদন সম্পন্ন করতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিপাদনকারী কর্মকর্তা।
গতকাল বুধবার বিকেলে খাদ্যগুদাম গিয়ে জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু তেঁতুলিয়া খাদ্যগুদামের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক বাস্তব প্রতিবেদন সম্পন্ন করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে গত ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই পর পর তিন দিন তেঁতুলিয়া এলএসডি পরিদর্শন করলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক বাস্তব প্রতিবেদন সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি ।
এ দিকে তেঁতুলিয়া খাদ্য গুদামে গিয়ে গুদামের বিভিন্ন খামালে খালি বস্তা, ধান, আমন চাল ও বোরো চাল সংগ্রহ এবং মজুদের সঙ্গে ব্যাপক গরমিলের সত্যতা পাওয়া যায় । এফএস-৩ এর ৩ নম্বর খামালে ওহি জুট ফাইবারের ২০ হাজার ৭৫ পিছ বস্তা থাকার কথা থাকলেও ৫টি বেল পরীক্ষা করে মাত্র ১টিতে ওহি জুট ফাইবারের নতুন বস্তা পাওয়া যায় এবং অন্য বেলগুলোতে পুরোনো অন্য মিলের বস্তা পাওয়া যায়। এ সময় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এই ঘটনা উদঘাটনের পরেও সকল বস্তা যাচাই করতে অস্বীকৃতি জানান। একই এফএস এর ৪ নম্বর খামালে ৭ হাজার ৬’শ ৩৪টি বস্তা থাকার কথা থাকলেও পুরনো ও ভিন্ন ভিন্ন মিলের ৬ হাজার ২০০টি বস্তা পাওয়া যায়, আবার ঘোষিত সংখ্যার ১৯৩৫টি খালি বস্তার ৫নং খামালই পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পরিদর্শনকালীন সময়ে বোরো ধান ক্রয়ে ওজনে কম ও আর্দ্রতা পরিমাপেও তারতম্য দেখা যায়। এ সময় আমন চালের খামালে বোরো ধানের স্টেনসিল যুক্ত বস্তা পাওয়া যাওয়ায় প্রতিপাদনকারী কর্মকর্তা (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) খামাল ভেঙে বস্তা মিলাতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া আহমেদ সবকিছু জেনে বুঝেও খামাল ভাঙ্গতে অস্বীকৃতি জানার সত্যতা পাওয়া যায়৷ তার মতে মোট বস্তার সংখ্যা ঠিক থাকলেই হবে তা বোরো বা আমন হোক না কেনো?
অভিযোগ রয়েছে, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘ দিন এই খাদ্য গুদামে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে৷ বিভিন্ন মৌসুমে প্রকৃত কৃষকদের কাছে ধান সংগ্রহ না করে নিজেদের পছন্দের মানুষকে কৃষক সাজিয়ে ও ব্যবসায়ীদের কাছে ধান সংগ্রহ করে সরকারি অর্থের অপচয় করার অভিযোগও উঠেছে৷ কৃষকরা বলছেন সরকারি ভাবে ধান, চাল ক্রয়ের নানা অনিয়ম রয়েছে গুদামের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকৃত কৃষকের পরিবর্তে ফরিয়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বছর অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হলেও লটারি না করে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অফিসের নিজের পছন্দের মানুষের নামে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, “আমি ধান বিক্রির জন্য অ্যাপে আবেদন করেছিলাম, কিন্তু কোনো লটারি হয়নি। পরে শুনি কিছু ফরিয়া ব্যবসায়ীর ধানই গুদামে গেছে। আমরা প্রকৃত কৃষকরা সুযোগই পেলাম না।
খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবেল আলম বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে সঠিকভাবে ধান সংগ্রহের। খামালের বিষয়গুলো তদন্তাধীন, সব কিছুই কাগজপত্র অনুযায়ী করা হয়েছে।”
তেঁতুলিয়ার সদ্য সাবেক উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামরুজ্জামান, যিনি বর্তমানে রংপুর বিভাগে সহকারী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন, মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি বদলি হয়েছি তেঁতুলিয়া থেকে। নিয়ম অনুযায়ী সব হয়েছে৷ অফিসে গেলেই তালিকা পাবেন৷”
তেঁতুলিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. জাকারিয়া আহমেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ধান কৃষকদের কাছ থেকে কেনা,অনিয়মের সুযোগ নাই আমাদের ৷ কৃষকদের একাউন্ট -পে মাধ্যমে আমরা তাদেরকে বিল দেই৷ এখানে আমি একেবারে নতুন৷ ওখানে কাগজপত্র দেখে আমি বক্তব্য দিতে পারবো
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, “সরকারি স্বার্থ রক্ষার্থে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। প্রাপ্ত অনিয়মের বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
