তাড়াইল উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের বরুহা গ্রামের কৃষকদের জমি ও খাল অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন একই এলাকায় তদন্তে নামে এবং দখল প্রচেষ্টার সময় বাঁশ, পাঠি, বায়না ও একটি টিনের ঘর পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, নরসুন্দা নদী তাড়াইল থেকে করিমগঞ্জের দিকে বয়ে যাওয়ার পথে জুয়ারিয়া বিলে একটি খাল রয়েছে যা বরুহা জুয়ারিয়া বিলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কৃষকের জমি ও সরকারি রাস্তা-ব্রিজ অতিক্রম করে। ওই বিলটিতে আনুমানিক ৩৫০০ একর জমি রয়েছে যেখানে হাজারো কৃষক চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ওই খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন ও সেচ ব্যবস্থা হয়—কৃষকদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, তাড়াইল উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোঃ সারোয়ার আলম (৪৫) ও দিগদাইড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদ উদ্দিন ভূঁইয়া (৪০) নেতৃত্বে কয়েকজন এলাকায় অবৈধভাবে খাল ও কৃষকের জমি দখলের জন্য তৈরী হচ্ছেন এবং সেখানে মাছসহ অন্যান্য সম্পদ লুটপাটের উদ্দেশ্য রয়েছে। অভিযোগকারী কৃষকদের মধ্যে আছেন মোঃ আমির হামজা দুলু (৫০), মোঃ খোকন ভূঁইয়া (৫২), আলেক মিয়া (৪৩) ও বাবুল মিয়া (৪১) প্রমুখ। তারা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ পপি আক্তারের নেতৃত্বে ৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে জুয়ারিয়া বিলের খালে ত’adাহত জরিপ ও তদন্ত পরিচালিত হয়। তদন্তে উপস্থিত ছিলেন তাড়াইল উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ সারোয়ার হোসেন ও সহকারী মৎস্য অফিসার মোঃ মশিউর রহমান। সরজমিনে দেখা যায় খালের উপর বাঁশ-বাঁধ, পাঠি, বায়না এবং একটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিযোগে নামজাদা শর্টলিস্টকৃত কয়েকজন—মোঃ ফরিদ উদ্দিন ভূঁইয়া, হবিক মিয়া ও তাদের সহকারী দল।
তদন্ত দলের মৎস্য অফিসার মোঃ সারোয়ার হোসেন বলেন, “কৃষকদের জমি বা খালের উপর বাঁধ দেওয়া যাবে না। কেউ যদি অবৈধভাবে জমি বা খাল দখল করার চেষ্টা করে, তাতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরো জানান, প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থার সুপারিশ ও রেকর্ড করা হচ্ছে।
অভিযোগের পাল্টা জবাবে, তাড়াইল উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোঃ সারোয়ার আলম বলেন, আগে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির আমলে তিনি ক্ষমতাবলে ছিলেন না; বর্তমানে বিএনপির অবস্থান দেশে শক্তিশালী হওয়ায় ক্ষমতা প্রয়োগ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন—তবে দলে বিষয়টি নিয়ে বিভক্তি রয়েছে। দিগদাইড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদ উদ্দিন ভূঁইয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলে জানা গেছে যে “সারা বাংলাদেশে আমাদের ক্ষমতা আছে, এই জমি ও খাল দখল করা হবে”—এ ধরনের বক্তব্য স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করেছে।
বরুহা গ্রামের কৃষকরা জানান, দলীয় পরিচয় দেখিয়ে তাদের জমি এবং খাল জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা হলে তারা চাষাবাদ করতে পারবে না এবং ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। কৃষকরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত রুখে دینے এবং তাদের জমি-খাল সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন। এক কৃষক মোঃ আলেক মিয়া বলেন, “যদি আমাদের জমি রক্ষা না করতে পারি, এই জমিতেই মরতে পারি” — এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
এ ঘটনার পর তাড়াইল উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ সামির হোসেন সাকি দাবি করেন, তাড়াইল উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব এ ধরনের অবৈধ কাজের পক্ষে নয় এবং তদন্তে যাওয়া অফিসার মোঃ সারোয়ার হোসেনকে সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করার জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়া তাড়াইল উপজেলার বিএনপি সভাপতি মোঃ সারোয়ার হোসেন লিটন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলীয় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সতর্কতা প্রদান করেছেন এবং দলের নাম ব্যবহার করে সরকারি বরাদ্দ বা সুবিধা নেওয়া থেকে নেতাকর্মীদের বিরত থাকার আহ্বান জারি করেছেন।
তদন্ত দলের প্রাথমিক রিপোর্ট ও প্রশাসনের পর্যবেক্ষণের পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ জনগণ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রত্যাশা করছেন।
