কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় বরুহা গ্রামের জুয়ারিয়া বিল ও কৃষকদের জমি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী গ্রামের কয়েকজন কৃষক ও স্থানীয়রা বলছেন— দখলকারী নেতাদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে রক্তক্ষয়ী অপরাধ ঘটতে পারে।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, তাড়াইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সারোয়ার আলম ও দিগদাইড় ইউনিয়নের বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদ উদ্দিন ভূঁইয়া’র বিরুদ্ধে বরুহা গ্রামের জুয়ারিয়া বিলে খাল, বিল ও কৃষকদের জমি অবৈধভাবে দখলের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ দায়ের করেন কৃষক মোঃ আমির হামজা দুলু, খোকন ভূঁইয়া, বাবুল মিয়া প্রমুখ। তারা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন; পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর একই অভিযোগ তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও করিমগঞ্জ সেনা ক্যাম্পে দাখিল করা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ পপি আক্তারের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি তাড়াইল উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ সারোয়ার হোসেনকে বরুহা গ্রামে সরজমিনে তদন্তে পাঠায়। মৎস্য অফিসার ৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে সেখানে গিয়ে অবৈধ খাল-বিল ও জমি দখল নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন এবং যদি কেউ কৃষকদের জমি/খাল অবৈধভাবে দখল করে, তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করে দেন।
কিন্তু আজ শুক্রবার ১০ অক্টোবর’২৫ ইং ভোর ৬টার দিকে অভিযোগকারী ও স্থানীয়রা দাবি করছেন যে, তাড়াইল উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোঃ সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে এবং দিগদাইড় ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদ উদ্দিন, মিলন মিয়া, বাচ্চু মিয়া, হবিক মিয়া প্রমুখ তাদের দলবল নিয়ে চুড়ান্তভাবে বাঁশ, কাট, বায়না নেট ও জাল দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে লাখ লাখ টাকার মাছ অপসারণ ও লুটপাটের জন্য মাঠে নেমে আসে, যার ফলে গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্ঠি হয়।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ পপি আক্তারকে ফোন করে পরিস্থিতি অবহিত করা হলে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সেখানে মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উপজেলা ভূমি অফিসার মোঃ জিসান আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে প্রভাব খাটিয়ে জবরদখল রোধ করা ও নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেন।
প্রশাসন জানায়, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং অবৈধ বাধ উচ্ছেদ করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের একজন, দিগদাইড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদ উদ্দিন দাবি করেন, “আগে আওয়ামী ক্ষমতায় ছিল, এখন আমরা বিএনপি ক্ষমতায় আছি, এই বিল আমরা দখল করবোই।” অভিযোগে আরও বলা হয়েছে—এক নম্বর বাদী মোঃ আমির হামজা দুলুকে ‘পায়ের রগ কেটে ফেলার’ হুমকি দেয়া হয়েছে এবং ‘সুযোগ পেলে মেরে লাশ গুম’ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
গ্রামের কৃষক মোঃ মীর হোসেন বলেন, “আমরা সাধারণ অসহায় গরীব মানুষ, চাষাবাদ ও খাল-বিলের মাছ আহরণ করে সংসার চালাই। তাড়াইল উপজেলা বিএনপি নেতা সারোয়ার আলম ও ফরিদ উদ্দিন যদি আমাদের এভাবে মানসিক ও আর্থিক অত্যাচার করে, আমরা কিভাবে বাঁচবো! আমরা তাড়াইল উপজেলা বিএনপি সভাপতি মোঃ সারোয়ার হোসেন লিটন ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আকুতি জানাই—আমাদের বাঁচান।”
স্থানীয়রা দাবি করেছে, “এই অত্যাচারী জালিম ভূমিদস্য বিএনপি নেতাদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।” তারা প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ চেয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ওই এলাকায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, অবৈধ দখলের যে কোনো বেআইনী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখবে।
এই মামলার পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া ও তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে বিভাগীয় এবং জেলা প্রশাসনের তরফে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। মামলায় নতুন তথ্য পাওয়া গেলে তা সংবাদে পরিবেশ করা হবে।
