শান্তিপুর্নভাবে শেষ হলো চাকসু নির্বাচন, এবার ফলাফলের অপেক্ষা

চবি থেকে এনামুল হক রাশেদীঃ

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন শান্তিপুর্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। এরপর শুরু হয়েছে ভোট গণনার প্রস্তুতি। নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভোট গ্রহণের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার না হওয়ার অভিযোগ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি ভবনের কেন্দ্রে কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছাড়াই ব্যালট পেপার পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, তাৎক্ষণিকভাবে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনির উদ্দিন বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ ছাড়া সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে।’ বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রায় ৫৫ শতাংশ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদে ১৫টি কেন্দ্রে মোট ৬০টি কক্ষে ৬৮৯টি বুথে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৭ জন। এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৯০৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ১৩টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে ৪১৫ জন এবং হল সংসদে ৪৯৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোটগ্রহণ শেষে ব্যালটগুলো ডিন অফিসে নেওয়া হয়েছে, যেখানে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে গণনা করা হচ্ছে। ফলাফল এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে সরাসরি প্রদর্শন করা হবে। এজন্য ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হয়েছে ১৪টি স্ক্রিন।

অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া

ভোট চলাকালে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা অভিযোগ করেন— কিছু কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের সই ছাড়া ব্যালট পাওয়া গেছে এবং অমোচনীয় কালি মুছে যাচ্ছে। সকাল থেকে শুরু হওয়া নির্বাচনে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের কয়েকটি ভোটকক্ষে এ অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

সরেজমিনে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৪০১ ও ৪০২ নম্বর কক্ষ এবং কলা ভবনের ৩১২৪ নম্বর কক্ষে দেখা যায়, ভোটারদের আঙুলে দেওয়া অমোচনীয় কালি ঘষে ফেলতেই উঠে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন  ইপিজেডে শ্রমিক ছাঁটাই প্রতিবাদে, সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ

স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপারের বিষয়ে তিনি ভুলের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আইটি ভবনে কিছু ব্যালটে স্বাক্ষর না থাকার বিষয়টি কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাদের জানিয়েছেন। এটি আসলে অসাবধানতাবশত কিছু ভুল। প্রায় ১০ থেকে ১২টি ব্যালটে এমন হয়েছে। আমরা সেগুলোতে প্রিজাইডিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর নিয়ে আলাদা করে চিহ্নিত করছি, যাতে গণনার সময় তা স্পষ্ট বোঝা যায়। সুতরাং এখানে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।’

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে জার্মানির অমোচনীয় কালি সময়মতো আনা সম্ভব হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ‘কালি মুছে গেলেও জাল ভোটের সুযোগ নেই।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ভোটার যাচাই তিন ধাপে করা হচ্ছে— সিরিয়াল নম্বর, আইডি ও ছবি মিলিয়ে সই নেওয়া হচ্ছে। তাই কেউ দ্বিতীয়বার ভোট দিতে পারবে না।’

বহিরাগতদের উপস্থিতির অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। কার্ড ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারেনি।’

দিনভর ক্যাম্পাসে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রার্থীদের সমর্থক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ছিল উৎসবের আমেজে।

এখন চলছে ভোট গণনা, ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন