চট্টগ্রাম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (সিইপিজেড) শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে শীর্ষ পর্যায়ের শিল্পগ্রুপ প্যাসিফিক গ্রুপের আটটি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে মালিকপক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বন্ধ করে দেওয়া কারখানাগুলো হলো— প্যাসিফিক জিন্স-১, প্যাসিফিক জিন্স-২, প্যাসিফিক অ্যাটায়ারস, প্যাসিফিক অ্যাক্সেসরিজ, প্যাসিফিক ওয়ার্কওয়ার্স, ইউনিভার্সেল জিন্স, এইচটি ফ্যাশন এবং জিন্স ২০০০।
প্যাসিফিক গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার সুহৃদ চৌধুরী বলেন, “বৃহস্পতিবার শ্রমিক বিক্ষোভের পর কারখানাগুলোতে প্রথমে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। রাতে মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ রাখার। শনিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।”
শ্রমিক বিক্ষোভ ও সংঘাতঃ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ইপিজেডের বিভিন্ন সেক্টরে প্যাসিফিক গ্রুপের বিভিন্ন কারখানার সামনে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। এ সময় কাজ বন্ধ হয়ে যায়, এবং বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ‘মারধরের’ অভিযোগ ওঠে।
প্যাসিফিক গ্রুপের এক কর্মকর্তা জানান, “গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা দাবি-দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিল। বৃহস্পতিবার তা তীব্র আকার ধারণ করে। আন্দোলনরত শ্রমিকরা অনেক কর্মকর্তাকে নাজেহাল করে এবং আক্রমণ করা হয়। রাতে আমাদের কাছে ছুটির নোটিস পাঠানো হয়।”
মালিকপক্ষের নোটিসে যা বলা হয়েছেঃ কারখানা বন্ধের নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে, “১৪ অক্টোবর কিছু শ্রমিক বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে। কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কাজে যোগদানের নির্দেশ দিলেও তারা কতৃপক্ষের সে নির্দেশ অমান্য করে ১৫ ও ১৬ অক্টোবরও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা নিজেদের মধ্যে মারামারি, ভাঙচুর ও কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে আঘাত করে।”
নোটিসে আরও বলা হয়, শ্রমিকদের এ আচরণ বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ অনুযায়ী বেআইনি ধর্মঘটের আওতাভুক্ত। শ্রমিকদের বাধার কারণে কারখানার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পুরনো অস্থিরতার ইতিহাসঃ এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শ্রমিকদের ২২ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে প্যাসিফিক গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক ক্যাজুয়াল লিমিটেডে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে মালিকপক্ষ দুটি ইউনিট বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে শ্রমিকরা মুচলেকা দিয়ে কাজে যোগ দেয়।
এছাড়া গত ৯ অক্টোবর প্যাসিফিক গ্রুপের কিছু শ্রমিক পুলিশের হয়রানির অভিযোগ তুলে ইপিজেড এলাকায় বিক্ষোভ করেছিল। এরপর ১৪ ও ১৫ অক্টোবর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কারখানায় বিক্ষোভ হয়। যদিও তখন সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।
বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটায় অবশেষে মালিকপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য সব কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
