চমেক হাসপাতাল বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় মধ্যবিত্তের ভরসা

পূর্বধারা প্রতিবেদক:

বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ঔষধ, বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন IUI (অভ্যন্তরীণ নিষিক্তকরণ), এবং উন্নত প্রজনন প্রযুক্তি যেমন IVF (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন), যা “টেস্টটিউব বেবি” নামে পরিচিত। চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে Laparoscopy এবং Hysteroscopy-এর মতো অস্ত্রোপচারও অন্তর্ভুক্ত। বন্ধ্যাত্বের কারণ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ডিম্বস্ফোটনের সমস্যা, বা শুক্রাণু উৎপাদনে সমস্যা হলে, নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়।

নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় এগিয়েছে চট্টগ্রাম। বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসায় সন্তান না হওয়ার আক্ষেপ ঘুচছে অনেক দম্পতির। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে বন্ধ্যাত্বের বিভিন্ন চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকরা চাইলেও সেই সেবা নিতে পারেন না। তাই চমেক হাসপাতালই তাদের একমাত্র ভরসা। চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালের গাইনিকোলজি বিভাগের অধীনে বহির্বিভাগে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা নিতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন রোগীরা। বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় ডেডিকেটেড অপারেশন থিয়েটারের প্রয়োজন হয়। অপারেশন থিয়েটার না থাকায় ল্যাপারোস্কপি ও হিস্টেরোস্কপি সার্জারি করা যায় না।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইনফার্টিলিটির বহির্বিভাগে গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৯১৭ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ট্রান্সভ্যাজাইনাল সনোগ্রাফি হয়েছে ৯০০ জনের, স্যালাইন ইনফিউশন সনোগ্রাফি (এসআইএস) হয়েছে ১১২ জনের, আর্টিফিশিয়াল ইনসেমিনেশন (আইইউআই) করা হয়েছে ৩৮ জনের। এরমধ্যে ইতোমধ্যেই ৫১ জন রোগীর গর্ভধারণ নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া হরমোন পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং প্রাথমিক ইনফার্টিলিটি ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন সেবা এখন নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে।

সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতিঔষধ:ডিম্বস্ফোটন প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করতে বা মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করতে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কিছু ওষুধ মুখে বা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ নিষিক্তকরণ (Intrauterine Insemination – IUI):
পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর সংখ্যা বা গতিশীলতা কম থাকলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (In Vitro Fertilization – IVF):এটি একটি সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি, যেখানে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুকে শরীরের বাইরে নিষিক্ত করা হয় এবং এরপর তা জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ল্যাপারোস্কোপি এবং হিস্টেরোস্কোপিএগুলো হলো এমন অস্ত্রোপচার পদ্ধতি যা জরায়ুর অস্বাভাবিকতা, পলিপ বা ফাইব্রয়েডের মতো সমস্যা নির্ণয় ও চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য পুরুষ বন্ধ্যাত্ব: শুক্রাণু উৎপাদন, শুক্রাণু পরিবহনে বাধা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং অণ্ডকোষের সংক্রমণ বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। নারী বন্ধ্যাত্ব: জরায়ুর অস্বাভাবিক গঠন, যেমন পলিপ বা ফাইব্রয়েড, এবং সার্ভিকাল সমস্যা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। কখন চিকিৎসা শুরু করবেন: মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত এক বছর নিয়মিত অরক্ষিত যৌন মিলনের পরও গর্ভধারণ না হলে, এবং ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ছয় মাস পর একজন উর্বরতা বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

আরও পড়ুন  নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা সহ্য করা হবে না: লক্ষীপুরে খায়ের ভূঁইয়া

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সন্তান ধারণের চেষ্টা করার পর টানা এক বছর সময়কাল যদি কেউ সফল না হন তাহলে তাকে ইনফার্টাইল বা সন্তান ধারণে অক্ষম হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে কত শতাংশ দম্পতি বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো দম্পতি এক বছর কোনো ধরণের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করেও যখন সন্তান ধারণ করতে পারেন না তখন সেই অবস্থাকে বন্ধ্যাত্ব বলা হয়। বন্ধ্যাত্ব নারী বা পুরুষ যেকোনো একজনের হতে পারে, আবার উভয়ের হতে পারে। দম্পতিদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রী এবং একই সংখ্যক স্বামীদের শারীরিক সমস্যা থাকে। বাকি ১০ ভাগ ক্ষেত্রে দুজনেরই সমস্যা থাকে।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের গাইনি ও ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাসলিমা বেগম বলেন, আমাদের আলাদা বিভাগ না থাকার কারণে আমরা রোগী ভর্তি দিতে পারি না। তবে আমরা বহির্বিভাগে অসংখ্য রোগী দেখে থাকি। বর্তমানে আমাদের ইনফার্টিলিটিতে ছয়জন এফসিপিএস ট্রেইনি রয়েছেন। আমাদের বিভাগ চালু করা গেলে রোগীরা আরো বেশি সেবা পেতেন। এছাড়া আমাদের জন্য আধুনিক ল্যাব ও অপারেশন থিয়েটার থাকলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাজারি ও পরীক্ষা নিরীক্ষা এখানেই করা যেতো। বিশেষ করে আমাদের হাসপাতালে আইভিএফ ইউনিট না থাকায় সেবা দিতে পারছি না। এখন এই সেবা নিতে রোগীদের ঢাকায় কিংবা বিদেশে দৌঁড়ঝাপ করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, নতুন বিভাগ চালু করার জন্য আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জায়গার সংকট। জায়গার সংকটের কারণে আমরা চাইলেও অনেক বিভাগ চালু করতে পারছি না। এখন তো বিদ্যমান অনেক বিভাগে ডাক্তারদের বসার জায়গারও সমস্যা হচ্ছে। তবে এই সমস্যা কেটে যাবে। বিশেষ করে ক্যান্সার ভবনে অনেকগুলো বিভাগ চলে যাবে। তখন জায়গার সমস্যাও কেটে যাবে।

আরও পড়ুন  রাজশাহী ‎দুর্গাপুরে মিথ্যা সংবাদ ও অসাংগঠনিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

 

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন