চট্টগ্রামে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক’শ রেলকর্মী। কনটেইনার ডিপো নির্মাণের জন্য রেলের জমি ইজারা বাতিলের দাবিতে ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে নগরীর সিআরবি এলাকায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দফতরে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভে রেলকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। পরবর্তীতে মহাব্যবস্থাপক বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিলে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর সিজিপিওয়াই এলাকায় রেলওয়ের একটি জায়গায় ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ কাজ চলছে। অভিযোগ রয়েছে, ডিপো নির্মাণের জন্য রেলের ভূমি ইজারা পাওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি ঐ এলাকায় অবস্থিত শতবর্ষী কবরস্থান, মসজিদ, মাজার ও আপদকালীন জলাশয়ের অংশ দখল করে নিয়েছে।
সকাল ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা সিআরবিতে পৌঁছালে তারা রেল ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এসময় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষুব্ধরা স্লোগান দিতে দিতে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। তারা “লিজ বাতিল করো”, “কবরস্থান–মসজিদ–মাজার বাঁচাও”—এমন নানা স্লোগানে রেল ভবন প্রাঙ্গণ মুখর করে তোলেন।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে নিরাপত্তা বাহিনী রেলওয়ের জিএম সুবক্তগীনের অফিসের মূল ফটক বন্ধ করে দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে ঘেরাও ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
বিক্ষোভে বক্তারা অভিযোগ করেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে গিয়ে কবরস্থান ও ধর্মীয় স্থাপনার জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে জালিয়াতি করেছে। শতবর্ষী ঐ কবরস্থানে প্রায় ৪৫০টি কবর রয়েছে, তবুও সেই জায়গা লিজে দিয়ে ধর্মীয় স্থাপনা উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে। তারা বলেন, “রেলওয়ের ইতিহাসে কখনো কবরস্থান দখল করে প্রকল্প নেওয়া হয়নি, এবার ভূ-সম্পত্তি বিভাগ নিজেই আইন ভঙ্গ করছে।”
বক্তারা আরও বলেন, আন্দোলনের মধ্যেই কৌশলে কবরস্থান ও মসজিদ উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চলছে। রেল সচিব ও উপদেষ্টার মৌখিক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও লিখিত আদেশ না আসা প্রতারণার শামিল। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায় না হলে সারাদেশে রেল ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে।
পরে দুপুর ১২টার দিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. সুবক্তগীন বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান। রেলওয়ে রানিং স্টাফ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ও সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল আধাঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে জিএম সুবক্তগীন সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টি আমরা অবগত আছি। রেলের মহাপরিচালক ও সচিব বিষয়টি পরিদর্শন করেছেন। শ্রমিকদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন থাকবে—কবরস্থান, মসজিদ ও মাজার রক্ষা করা হবে। আগামীকাল বুধবার একটি কমিটি স্থানগুলো চিহ্নিত করবে।”
আশ্বাসের পর দুপুর ১টার দিকে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে স্থান ত্যাগ করেন।
