বাংলাদেশের প্রান্তিক ও গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে সরকার চালু করে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস্)। প্রথমে কোর্সটির নাম ছিল মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং কোর্স, যা ১৯৮৫ সালে আধুনিকায়নের মাধ্যমে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) হিসেবে পুনঃনামকরণ করা হয়।
এই কোর্সটি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত, এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের সনদপত্র প্রদান করে আসছে।
তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তে সারাদেশের ৯টি ম্যাটস্-এর ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। আচমকা এই সিদ্ধান্তে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তায় পড়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না আসায় শিক্ষার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে বেসরকারি খাতে বা অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন।
ম্যাটস্ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা চার বছরের কঠোর তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ শেষে গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকেন। চিকিৎসক সংকটে ভোগা বহু এলাকায় এরা একমাত্র নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাসেবক, অথচ দীর্ঘদিন সরকারি নিয়োগ বন্ধ থাকায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, যা মানসিক চাপ ও পেশাগত হতাশা সৃষ্টি করছে।
রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ ও বিএমডিসি কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্রে স্পষ্টভাবে “ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ)” লেখা থাকলেও, অনেক সরকারি নথি ও ওয়েবসাইটে এখনও পুরনো নাম মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং কোর্স ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের পরিচয় নিয়ে চরম বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
এই অবস্থায় স্বাস্থ্যখাতের জন্য নতুন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ, যেখানে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, সেখানে প্রশিক্ষিত ডিএমএফ জনবলকে ব্যবহার করা গেলে সেবার মান অনেক বৃদ্ধি পেত। কিন্তু নির্দিষ্ট নিয়োগ নীতির অভাবে সেই জনবল বর্তমানে অকার্যকর হয়ে আছে।
ডিএমএফ শিক্ষার্থীদের দাবি,“রাষ্ট্রীয়ভাবে কোর্সের নাম আইনি ও বাস্তব অনুযায়ী সংশোধন করতে হবে এবং অবিলম্বে ভর্তি কার্যক্রম পুনঃসক্রিয় করতে হবে। এতে দীর্ঘদিনের বিভ্রান্তি, বৈষম্য ও পেশাগত অবমূল্যায়ন দূর হবে।”
একজন ডিএমএফ শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—‘ এলাইড হেলথ শিক্ষা বোর্ড’ শিরোনামে আইনটির খসড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে, যা এখন বাস্তবায়ন-অপেক্ষায়। এটি ডিএমএফ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট অবমাননা।”
শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি—“যদি অবিলম্বে ‘এলাইড হেলথ শিক্ষা বোর্ড’ প্রস্তাবটি বাতিল করে সর্বসম্মত ও গ্রহণযোগ্য নামের প্রজ্ঞাপন জারি না করা হয়, তবে দেশের সকল ডিএমএফ শিক্ষার্থী রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। প্রয়োজনে তীব্র গণআন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
তাদের দাবিতে একটাই সুর —“ডিএমএফ শিক্ষার্থীদের ধৈর্যের সীমা এখন শেষ প্রান্তে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জবাব রাজপথেই দেওয়া হবে!”
