যমুনা অয়েল কোম্পানির ফতুল্লা ডিপোতে প্রায় পৌনে চার লাখ লিটার ডিজেল গায়েবের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, কিন্তু এরই মধ্যে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির এক সদস্যের নাম উঠেছে পদোন্নতির তালিকায়! এতে প্রতিষ্ঠানজুড়ে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সরকার জ্বালানি তেল চুরি ও অপচয় রোধে নির্মাণ করেছে ঢাকা–চট্টগ্রাম পাইপলাইন। গত জুনে চালু হয় এই লাইন দিয়ে সরাসরি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা টার্মিনাল থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ডিপোতে তেল সরবরাহ।
সূত্র জানায়, চালুর পর থেকেই ফতুল্লা ডিপোর ২২ ও ২৩ নম্বর ডিজেল ট্যাংকের ক্যালিব্রেশন রিপোর্ট ভুল রেখেই অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ফলে হিসাবের গরমিল দেখা দেয় এবং গায়েব হয় প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার লিটার ডিজেল। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে।
ঘটনার পর জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং যমুনা অয়েল কোম্পানি— এই তিন সংস্থা পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো কমিটিই এখনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
এ অবস্থায় যমুনা অয়েল কোম্পানিতে শুরু হয়েছে পদোন্নতির তোড়জোড়।
সূত্র জানায়, ব্যবস্থাপক থেকে সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদে উন্নীত হওয়ার তালিকায় রয়েছেন ১০ কর্মকর্তা, আর উপব্যবস্থাপক থেকে ব্যবস্থাপক হওয়ার তালিকায় আছেন চারজন।
এই চারজনের মধ্যে রয়েছেন ফতুল্লা ডিপোর অভিযুক্ত ইনচার্জ মো. আসলাম খান আবুল উলায়ী এবং তদন্ত কমিটির সদস্য ও কন্ট্রোলার অব ডিপো শেখ জাহিদ আহমেদ।
একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, “তদন্ত চলমান থাকা অবস্থায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার পদোন্নতি শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয়, তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি করবে।”
জানা গেছে, ঢাকায় যমুনা অয়েল কোম্পানির লিয়াজো অফিসে শিগগিরই পদোন্নতি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক উপসচিব।
এ বিষয়ে যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কুদরত-ই-এলাহী বলেন, “পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট বোর্ড সদস্যরা তাদের যোগ্যতা বিবেচনা করেই নেবেন। এর বাইরে আমরা কোনো মন্তব্য করতে পারব না।”
অভিযুক্ত মো. আসলাম খান আবুল উলায়ী ও শেখ জাহিদ আহমেদ–এর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ সাড়া দেননি। মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠানো হলেও তারা কোনো জবাব দেননি।
এ ছাড়া পদোন্নতির তালিকায় রয়েছেন—
ডেপুটি ম্যানেজার (শিপিং) মো. আবু হাসনাত,
ডেপুটি ম্যানেজার (অপারেশন্স) জি এম হারুন অর রশীদ, ডেপুটি ম্যানেজার (ডিপো) মোহাম্মদ শাহজালাল, মো. আবু মনসুর মজুমদার ও মো. খাইরুল কবির, ম্যানেজার (ডিপো) মো. রাশেদুল ইসলাম, ম্যানেজার (ট্যাংকার) মো. আখতার মোহাইমিনুল হক, ম্যানেজার (সেলস) সাইদুল আলম চৌধুরী, মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ম্যানেজার (অপারেশন্স) মো. গোলাম কিবরিয়া এবং ম্যানেজার (অ্যাডমিন) ফয়েজ আহাম্মদ রউফ ও খাইরুন নেছা।
