চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদের নবনির্বাচিত প্রতিনিধিরা শপথ নিয়েছেন। ২৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চাকসুর সভাপতি ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার নবনির্বাচিতদের শপথ বাক্য পাঠ করান। ৯টি ছাত্র হল, ৪টি ছাত্রী হল ও ১টি হোস্টেলের প্রভোস্টবৃন্দ সংশ্লিষ্ট সংসদের প্রতিনিধিদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক থেকে পাঠ করা হয়। এরপর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ দুই শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ও ফরহাদ হোসেনের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এদিকে শপথ অনুষ্ঠান শুরুর আগে কিছুক্ষণ হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। চাকসুর পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘অপত্তিকর মন্তব্য’-এর অভিযোগ তুলে একদল শিক্ষার্থী তাকে অনুষ্ঠানে না রাখার দাবি জানান। পরে চাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি ও ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি মোহাম্মদ আলীর আহ্বানে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আকাশ দাশের অনুপস্থিতিঃ
ধর্ষণ নিয়ে ‘বিতর্কিত মন্তব্যের’ জেরে সমালোচনার মুখে থাকা চাকসুর নির্বাহী সদস্য আকাশ দাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। ফলে তিনি শপথ নেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আকাশ দাশের মন্তব্যের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয় এবং বহু নবনির্বাচিত প্রতিনিধি তার সঙ্গে একই মঞ্চে শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানান।
এর আগে আকাশ দাশ তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছিলেন, “ধর্ষণে ছেলের দোষ যদি ৭০ ভাগ থাকে, মেয়েরও ৩০ ভাগ দোষ আছে।” এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা এটিকে নারীবিদ্বেষী ও বিকৃত মানসিকতার প্রতিফলন বলে আখ্যা দেন।
আকাশ দাশ বলেন, “আমার পোস্টকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় শপথে গেলে হয়তো আরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো। আমার কারণে কারও শপথ ব্যাহত হোক, তা আমি চাইনি।”
চাকসুর জিএস ও শিবির প্যানেল থেকে নির্বাচিত সাঈদ বিন হাবিব বলেন, “আকাশের মন্তব্যের কারণে ক্যাম্পাসে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তাই সে শপথ গ্রহণে অংশ নেয়নি।”
নির্বাচন কমিশনের মন্তব্যঃ
শপথ অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবশেষে একটি প্রতিনিধিত্বশীল ছাত্র সংসদ পেয়েছে। আজ শপথের মাধ্যমে আমাদের কমিশনের দায়িত্ব শেষ হলো।”
নবনির্বাচিতদের অঙ্গীকারঃ
চাকসুর নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, “এই নির্বাচন কোনো চমক লাগানোর জন্য নয়। দীর্ঘ ৩৫ বছর আমরা দাবি জানিয়েছি, এবার অধিকার আদায় করবো।”
চাকসুর সভাপতি ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, “শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল চাকসু নির্বাচন। আজ সেটি বাস্তবায়িত হয়েছে।”
শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ভিপি জসিম উদ্দিন সরকার, মাজহারুল হক চৌধুরী, এস এম ফজলুল হক, শামসুজ্জামান হিরা ও সাবেক জিএস মাহমুদুর রহমান মান্না।
গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটের ইব্রাহিম হোসেন রনি, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদের মধ্যে ২৪টিতে বিজয়ী হয় শিবির সমর্থিত প্যানেল।
