২০৩০ সালের মধ্যেই অপারেশনে যাবে চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল: চবক চেয়ারম্যান

এনামুল হক রাশেদীঃ

চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল প্রতীক্ষিত বে টার্মিনাল ২০৩০ সালের মধ্যেই অপারেশনে যাবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস.এম. মুনিরুজ্জামান।

তিনি বলেন, নানা জটিলতা কাটিয়ে এখন বাস্তবায়নের পথে আলো দেখাচ্ছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মেগা প্রকল্পটি। ইতোমধ্যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি (আইআইএফসি)-কে প্রকল্পের ট্রানজ্যাকশন অ্যাডভাইজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের জুনে বে টার্মিনালের স্রোতরোধী প্রাচীর (Breakwater) ও এক্সেস চ্যানেল নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) বন্দর অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘জেনারেল মার্কেট এনগেজমেন্ট কনফারেন্স ফর দ্য বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন্দর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, “আগামী ১০০ বছরের চাহিদা মাথায় রেখে বে টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য এক গেম চেঞ্জার প্রকল্প হবে, যা চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্বমানের বন্দরের কাতারে নিয়ে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “বে টার্মিনাল শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। এটি চালু হলে দেশের রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং জাহাজ আগমনের সময় নাটকীয়ভাবে কমে আসবে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও আসবে আমূল পরিবর্তন।”

সবকিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে আগামী বছরের জুনে মূল নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে জানিয়ে চবক চেয়ারম্যান বলেন, বে টার্মিনালের নকশা ও প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওছার রশিদ বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে বে টার্মিনাল বাস্তবায়ন সময়ের দাবি। প্রকল্পের আওতায় সাগরে ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন চ্যানেল নির্মাণের পাশাপাশি রেল ও সড়ক সংযোগ, কনটেইনার ইয়ার্ড, জেটি ও আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করা হবে।”

তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০৩১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে ‘বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ বাস্তবায়ন করবে। নগরীর উত্তর হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় গড়ে উঠবে এই বিশাল টার্মিনাল।

আরও পড়ুন  বাঁশখালীতে ৩ সন্তানের জননীর ঝুলন্ত লা'শ উদ্ধার

বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, বে টার্মিনাল চালু হলে বছরে কমপক্ষে ৩০ লাখ টিইইউ (২০-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে—যা বর্তমান সক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ।

মতবিনিময় সভায় অংশ নেন প্রকল্পের সম্ভাব্য দেশি ও বিদেশি ঠিকাদারদের প্রতিনিধি, বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, প্রকৌশলী ও পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।

সভায় বক্তারা বলেন, বে টার্মিনাল সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আঞ্চলিক বাণিজ্যের অন্যতম লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। চট্টগ্রাম বন্দরের শতবর্ষী ঐতিহ্য তখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন