এডাব-এর উদ্যোগে চট্টগ্রামে বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস-২০২৫ উদযাপন

সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারসমূহের প্রতি সম্মান ও সহায়তা নিশ্চিতের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে শনিবার  চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে  এডাব (এসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ) এর উদ্যোগে “সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নির্যাতনের অবসান: দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারসমূহের প্রতি সম্মান ও কার্যকর সহায়তা নিশ্চিতকরণ” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এডাব-চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সদস্য সচিব ও উৎস’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কামাল যাত্রা’র সঞ্চালনায় ও  এডাব-চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও প্রত্যাশী’র নির্বাহী পরিচালক মনোয়ারা বেগম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার শুরুতেই সদ্য প্রয়াত ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আহসান উল্লাহ চৌধূরীর জন্য ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডাব এর কর্মসূচী পরিচালক জনাব কাউসার আলম কনক, যেখানে বলা হয়— “দারিদ্র্য কেবল আয়ের অভাব নয়, এটি মানুষের মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও অন্তর্ভুক্তির প্রশ্ন।” প্রবন্ধে বিশ্বব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে, আর বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ক্রমশই বাড়ছে।  আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন ইলমা’র প্রধান নির্বাহী জেসমিন সুলতানা পারু, এডাব-এর পরিচালক একেএম জসীম উদ্দিন, এনআরডিএস-এর নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল, এইড কুমিল্লার নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া বেগম শেফালী।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন স্বপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলী শিকদার, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরাম এর সিনিয়র কর্মকর্তা মোঃ সোহেলউদ্দৌজা, , ডিডিআরসি-এর সমন্বয়কারী নূর নাহার ও বাংলাবন্ধু এর প্রধান নির্বাহী আ.স.ম আক্তার হোসাইন, এডাব-কক্সবাজার জেলার সভাপতি ও  সিসিডিএফ এর নির্বাহী পরিচালক সুব্রত দত্ত, এডাব-কুমিল্লা জেলার সদস্য সচিব ও  প্রত্যয়-এর নির্বাহী পরিচালক মাহমুদা আক্তার, এডাব-ফেনী জেলার সভাপতি ও  অপেক-এর নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল আজিজ ও এডাব-নোয়াখালী জেলার সভাপতি ও এসো গড়ি উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল।
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন প্রচেষ্টাকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বিশেষ করে উপকূলীয় ও চরাঞ্চলসহ শহরের বস্তিগুলোতে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে।
সভায় আলোচকরা উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ক্ষমতায়ন, ক্ষুদ্রঋণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। বর্তমানে দেশে ৭২৪টি ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা প্রায় ৪ কোটি ১৫ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যা আত্মকর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখছে।
বক্তারা দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য দূরীকরণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নারী ও যুবদের কারিগরি প্রশিক্ষণ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
তারা আরও বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচন কেবল সরকারের কাজ নয়, এটি সমাজের প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।”
বক্তারা আরো বলেন দরিদ্রতা মানুষের মানসিকতাকে বিপর্যস্ততায় ধাবিত করে, মানসিক চাপের কারনে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক অরাজকতা।
সমাপনি বক্তব্যে সভাপতি বলেন— সম্মিলিত প্রচেষ্টা, মানবিক আচরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি মর্যাদা ও সহায়তার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
তাদের মতে, সামাজিক সহনশীলতা ও ন্যায়ভিত্তিক সুশাসনের মাধ্যমেই ২০৩০ সালের এসডিজি লক্ষ্য অনুযায়ী “দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ” গড়া সম্ভব। সভার শুরুতে একটি র‌্যালি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাব-এ শেষ হয়।
আরও পড়ুন  একাডেমি কাপ ফুটবলে জুনিয়র টিমের কাছে ধরাশয়ী সিনিয়র টিম
শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন